03:48am Monday, 25 Jan 2021 ||
||
|
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
![]() বাংলা সাহিত্যের মোহে বিমোহিত হয়ে যে বাঙালি তার পরম কাঙ্ক্ষিত ইংরেজি সাহিত্যকে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। মধুসূদন বাংলা সাহিত্যের প্রথম আধুনিক কবিই নন, প্রথম সার্থক নাট্যকারও। তিনি যখন বাংলা সাহিত্যে প্রবেশ করেছিলেন বাংলা সাহিত্য তখনো তার কৈশোরের দ্বিধা ত্যাগ করে অনাগত যৌবন অর্থাৎ রেনেসাঁসের দিকে ধাবিত হতে পারেনি। তিনিই প্রথম নবজীবনবোধের সঙ্গে নবীনতম আঙ্গিকের সমন্বয় সাধন করে বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতা আনয়ন করেন। তিনি আধুনিক বাংলা কবিতার পথ নির্মাতা।
এই মহাকবির জন্মদিন আজ। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কেশবপুর থানার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামের বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্ম নেন মধুসূদন দত্ত। তার বাবা ছিলেন রাজনারায়ণ দত্ত ও মা জাহ্নবী দেবী। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাগরদাঁড়িতে চলছে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা।
কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের অনন্য সাহিত্যকীর্তি আমাদের ভাষা ও সাহিত্যের মহামূল্যবান সম্পদ। পত্রকাব্য, মহাকাব্য, সনেট, নাটক, সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তার অমর সৃষ্টিসমূহ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে আসীন করেছে। অমিত্রাক্ষর ছন্দ ও চতুর্দশপদী কবিতার স্রষ্টা এই কবি বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি ইংরেজি সাহিত্যেও অসামান্য অবদান রাখায় বিশ্ববাসী এই ধীমান কবিকে মনে রেখেছে কৃতজ্ঞচিত্তে।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও নাট্যকার তথা বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব। সম্ভ্রান্ত হিন্দু কায়স্থ বংশে জন্ম হলেও মধুসূদন যৌবনে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে মাইকেল মধুসূদন নাম গ্রহণ করেন এবং পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণবশত ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন আকৃষ্ট হন নিজের মাতৃভাষার প্রতি। এই সময়েই তিনি বাংলায় নাটক, প্রহসন ও কাব্যরচনা করতে শুরু করেন।
মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্য। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলী : দ্য ক্যাপটিভ লেডি, শর্মিষ্ঠা, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা, তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলী, হেকটর বধ ইত্যাদি।
মধুসূদনের ধারণা ছিল ইংল্যান্ডে গমন করতে না পারলে, আর ইংরেজি সাহিত্য চর্চা ছাড়া তার কবিত্বশক্তি বিকাশের সুযোগ ঘটবে না। সেজন্য তিনি ১৮৪৩ সালে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হয়ে �মাইকেল� উপাধি ধারণ করেন। ইংরেজদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য রচনা করেন �The Captive Ladie� এর মতো বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। এই গ্রন্থটি তৎকালীন ইংরেজ সাহিত্যিকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। মধুসূদন থাকলে তাদের সাহিত্যকর্ম স্থান পাবে না এই সংশয় তাদের মাঝে প্রকটভাবে দানা বাধতে থাকে।
অন্যদিকে তিনি এ গ্রন্থটি বন্ধু গৌরীদাসের মাধ্যমে বেথুন সাহেবকে উপহার পাঠিয়েছিলেন। বেথুন সাহেব গ্রন্থটি পড়ে বিমোহিত হয়ে তাকে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনার পরামর্শ দেন। ইংরেজি সাহিত্যে তার কীর্তির যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় তিনি মনক্ষুন্ন হয়ে পড়েন। তখনই বুঝতে পারেন শেকড় ভোলার জ্বালা। ইংরেজি সাহিত্য থেকে ছিটকে পড়ে বন্ধু মহলের পরামর্শে মধুসূদন বাংলাভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। ফলে বাংলা সাহিত্য পেল- শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য, কৃষ্ণকুমারী, মেঘনাদবদ কাব্য, ব্রজঙ্গনা কাব্য, বীরঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশদপদী কবিতাবলী, হেক্টরবধ এর মতো বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম।
মধুসূদন দত্ত নাট্যকার হিসেবেই প্রথম বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে পদার্পণ করেন। রামনারায়ণ তর্করত্ন বিরচিত `রত্নাবলী` নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি বাংলা নাট্যসাহিত্যে উপযুক্ত নাটকের অভাব বোধ করেন। এই অভাব পূরণের লক্ষ্য নিয়েই মধুসূদন নাটক লেখায় আগ্রহী হয়েছিলেন। ১৮৫৯ সালে তিনি রচনা করেন �শর্মিষ্ঠা` নাটক। এটিই প্রকৃত অর্থে বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক নাটক। ১৮৬০ সালে রচনা করেন দুটি প্রহসন : `একেই কি বলে সভ্যতা` এবং `বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ` এবং পূর্ণাঙ্গ `পদ্মাবতী` নাটক। পদ্মাবতী নাটকেই তিনি প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেন। ১৮৬০ সালেই তিনি অমিত্রাক্ষরে লেখেন `তিলোত্তমাসম্ভব` কাব্য। এরপর একে একে রচিত হয় `মেঘনাদ বধ কাব্য` (১৮৬১) নামে মহাকাব্য, `ব্রজাঙ্গনা` কাব্য (১৮৬১), `কৃষ্ণকুমারী` নাটক (১৮৬১), `বীরাঙ্গনা` কাব্য (১৮৬২), চতুর্দশপদী কবিতা (১৮৬৬)।
বিশ্বসাহিত্যে সনেট কবিতা একটি অভাবনীয় সৃষ্টি হিসেবে পরিগণিত। এই সনেট মধুসূদনই প্রথম বাংলা সাহিত্যে নিয়ে আসেন। তিনি না থাকলে হয়তো আমরা সনেটের সংজ্ঞার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতাম। মধুসূদন ফ্রান্সের ভার্সাই নগরে থেকেও ভোলেননি স্বদেশভূমিকে। শৈশব স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদকে। এই নদকে উদ্দেশ্য করে তাই লিখেছেন-
�সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে,
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে�
(কপোতাক্ষ নদ)
শুধু দেশকে ভোলায় সর্বদা দগ্ধ হয়েছেন। তিনি জানতেন স্বদেশই কোনো মানুষের একমাত্র আশ্রয়। দেশ মাতা ক্ষমা না করলে সে অভিশপ্ত হয়ে যাবে। তাই মায়ের কাছে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি তার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। বলেছেন-
�রেখো মা, দাসেরে মনে, এ মিনতি করিপদে।
সাধিতে মনের সাধ, ঘটে যদি পরমাদ,
মধুহীন করোনা গো তব মন: কোকনাদে।�
(আত্ম বিলাপ)
মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। আইন ব্যবসায়ে তিনি তেমন সাফল্য লাভ করতে পারেননি। তা ছাড়া অমিতব্যয়ী স্বভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েন। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে কপর্দকহীন (অর্থাভাবে) অবস্থায় তিনি মারা যান। মহাকবি জীবনের অন্তিম পর্যায়ে জন্মভূমির প্রতি তার সুগভীর ভালবাসার চিহ্ন রেখে গেছেন অবিস্মরণীয় পংক্তিমালায়। তার সমাধিস্থলে নিচের কবিতাটি লেখা রয়েছে-
�দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব
বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল! এ সমাধি স্থলে
(জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি
বিরাম)মহীর পদে মহা নিদ্রাবৃত
দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন!
যশোরে সাগরদাঁড়ি কবতক্ষ-তীরে
জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি
রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী
|
আজকের এই দিনে
|
Editor : Husnul Bari Address : 8/A-8/B, Gawsul Azam Super Market, Newmarket, Dhaka-1205 Contact : 02-9674666, 01611504098 Powered by : Digital Synapse
|